ঢাকা ০৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

হত্যাকারীদের সুরক্ষা কেন?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৭:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ৭ বার পড়া হয়েছে

নাদিম মাহমুদ:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর খন্দকার মুশতাক আহমেদরা একটি অধ্যাদেশ বা ইনডেমনিটি জারি করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো।

আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই হতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।

ঘটনা দু’টি ভিন্ন হলোও আইনের ভাষা ও শব্দ প্রয়োগ প্রায় একই ধরনের। যদিও সরকার এই আদেশটিকে এখনো ইনডেমনিটিতে নিয়ে যায়নি, তবে যে চাতুরতায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে, তা অনেকটাই ‘সাধারণ ক্ষমার’ আদলে করা। আমি নিশ্চিত নয়, সরকার কেন এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাচ্ছে, তবে তড়িঘড়ি করে এমন আইন করা উচিত হবে না, যা সরকারের এই কার্যক্রমকে বিতর্কিত করে ফেলে।

গণমাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৪৩ জন মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে আর ৪৪২ জনকে হত্যা করা হয়েছে ৫ আগস্টের পর। আর সেই কারণে সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে আজ ৮ আগস্ট শব্দটি এসেছে। আপনি যদি ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে চান, তাহলে অর্ধেক হত্যাকাণ্ড ৫ আগস্টের পরও ঘটেছে। সেটারও বিচার করতে হবে। আপনি যদি মনে করেন, অর্ধশত (সরকারি ভাষ্য) পুলিশ হত্যা, শতাধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হত্যা, হোটেলে পুড়িয়ে হত্যা, বাসায় পুড়িয়ে হত্যাগুলো ‘গণঅভ্যুত্থান সাফল্যমণ্ডিত’ করার অংশ তাহলে আমি বলব, একপেশে আইন, যা অপরাধীদের রক্ষায় প্রয়োগ হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি প্রাণ ঝরেছে এই দেশেই, প্রত্যেক স্বজনের বেদনা একই। প্রতিটি শিশুর বাবা হারানোর বেদনা একই, ভাই-বোন হারানোর ব্যথা এক। তাহলে একদল বিচারের আওয়তায় আসবে আর একদল উসৃঙ্খল মানুষকে হত্যাকাণ্ড থেকে রেহায় দেয়া হবে, তা কখনো সভ্যদেশে হতে পারে না।

আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে দাবি করে আসছি, যারা আমাদের নিরীহ শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের বুকে গুলি করেছে, হত্যা করেছে তাদের বিচার আমি চাই।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ইনডেমনিটি আইনটি ২১ বছর পর বাতিল হয়েছে, আজকে একদল মানুষকে হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষার আইন হয়ত কোনদিন বাতিল হবে। শুধু বিতর্ক তৈরির জন্য এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একদল মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা কখনোই শুভ হতে পারে না। আর এই প্রতিবাদটি এখানেই করে রাখলাম।

 

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

হত্যাকারীদের সুরক্ষা কেন?

আপডেট সময় : ০৫:৪৭:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

নাদিম মাহমুদ:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর খন্দকার মুশতাক আহমেদরা একটি অধ্যাদেশ বা ইনডেমনিটি জারি করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো।

আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই হতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।

ঘটনা দু’টি ভিন্ন হলোও আইনের ভাষা ও শব্দ প্রয়োগ প্রায় একই ধরনের। যদিও সরকার এই আদেশটিকে এখনো ইনডেমনিটিতে নিয়ে যায়নি, তবে যে চাতুরতায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে, তা অনেকটাই ‘সাধারণ ক্ষমার’ আদলে করা। আমি নিশ্চিত নয়, সরকার কেন এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাচ্ছে, তবে তড়িঘড়ি করে এমন আইন করা উচিত হবে না, যা সরকারের এই কার্যক্রমকে বিতর্কিত করে ফেলে।

গণমাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৪৩ জন মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে আর ৪৪২ জনকে হত্যা করা হয়েছে ৫ আগস্টের পর। আর সেই কারণে সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে আজ ৮ আগস্ট শব্দটি এসেছে। আপনি যদি ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে চান, তাহলে অর্ধেক হত্যাকাণ্ড ৫ আগস্টের পরও ঘটেছে। সেটারও বিচার করতে হবে। আপনি যদি মনে করেন, অর্ধশত (সরকারি ভাষ্য) পুলিশ হত্যা, শতাধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হত্যা, হোটেলে পুড়িয়ে হত্যা, বাসায় পুড়িয়ে হত্যাগুলো ‘গণঅভ্যুত্থান সাফল্যমণ্ডিত’ করার অংশ তাহলে আমি বলব, একপেশে আইন, যা অপরাধীদের রক্ষায় প্রয়োগ হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি প্রাণ ঝরেছে এই দেশেই, প্রত্যেক স্বজনের বেদনা একই। প্রতিটি শিশুর বাবা হারানোর বেদনা একই, ভাই-বোন হারানোর ব্যথা এক। তাহলে একদল বিচারের আওয়তায় আসবে আর একদল উসৃঙ্খল মানুষকে হত্যাকাণ্ড থেকে রেহায় দেয়া হবে, তা কখনো সভ্যদেশে হতে পারে না।

আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে দাবি করে আসছি, যারা আমাদের নিরীহ শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের বুকে গুলি করেছে, হত্যা করেছে তাদের বিচার আমি চাই।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ইনডেমনিটি আইনটি ২১ বছর পর বাতিল হয়েছে, আজকে একদল মানুষকে হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষার আইন হয়ত কোনদিন বাতিল হবে। শুধু বিতর্ক তৈরির জন্য এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একদল মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা কখনোই শুভ হতে পারে না। আর এই প্রতিবাদটি এখানেই করে রাখলাম।

 

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক